বাংলাদেশে করোসল ফল ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই ফল বাংলাদেশে টক আতা নামেও পরিচিত। এমন অনেক মানুষ আছে যারা জানেই না, একটি ফল কতভাবে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে। করোসল ফল শুধু পুষ্টিকর নয়, আয়ুর্বেদ, হারবাল মেডিসিন ও আধুনিক চিকিৎসায়ও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
করোসল ফলের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
করোসল ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Annona muricata। বিদেশে একে Graviola fruit বা Soursop fruit বলা হয়। বাংলাদেশে এই ফলকে অনেকেই টক আতা বলে থাকে। করোসল ফলের বাইরের অংশ সবুজ এবং ভেতরে নরম সাদা পাল্প। স্বাদে এটি টক-মিষ্টির মিশ্রণ, যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু।
বাংলাদেশে করোসল ফল কোথায় পাওয়া যায়
অনেকেই জানতে চান করোসল কোথায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এখন এই ফল বিভিন্ন শহরের ফলের মার্কেটে পাওয়া যায়। ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটের বড় মার্কেটগুলোতে করোসল ফল সাধারণত পাওয়া যায়। এছাড়া অনেকেই এখন করোসল ফল বিক্রি করছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
করোসল ফল খেলে শরীর কীভাবে সুস্থ থাকে
করোসল ফলের মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, মিনারেল এবং এনজাইম যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এই ফল নিয়মিত খেলে—
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়
- হজম শক্তি বাড়ে
- শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি পায়
- রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
প্রতিদিন সকালের দিকেই করোসল ফল খেলে শরীর টক্সিনমুক্ত থাকে এবং কাজে মনোযোগ বাড়ে।
করোসল ফল খাওয়ার নিয়ম
খাওয়ার নিয়ম অত্যন্ত সহজ। ফলটি কেটে ভেতরের সাদা অংশ চামচ দিয়ে খাওয়া যায়। কারও কারও পছন্দ জুস হিসেবে খাওয়া। খালি পেটে খাওয়া ভালো, তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আছে তারা দুপুর বা রাতে খাবারের পরও খেতে পারেন।
করোসল পাতা খাওয়ার নিয়ম
অনেকে শুধু ফল নয়, করোসল গাছের পাতা খাওয়ার নিয়মও জানতে চান। পাতার ব্যবহার সাধারণত হারবাল মেডিসিনে হয়ে থাকে। শুকনো করোসল পাতা দিয়ে চা বানানো যায়। এই চা শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে এবং স্ট্রেস কমাতে কার্যকর।
করোসল ফল এবং ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা
করোসল ফলকে পৃথিবীর অনেক জায়গায় ক্যান্সার প্রতিরোধক ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই ফলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমানোর ক্ষমতা রাখে। যদিও এটি কোনও চিকিৎসার বিকল্প নয়, কিন্তু হেলথ সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
করোসল গাছ কোথায় পাওয়া যায় বাংলাদেশে
বাংলাদেশে এখন অনেক নার্সারিতেই করোসল গাছ পাওয়া যায়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, খুলনা, কুমিল্লা—এইসব এলাকায় করোসল গাছের চারা সহজে পাওয়া যায়। বাড়ির বাগান বা টবে করোসল চাষ করা খুব সহজ।
বাংলাদেশে করোসল চাষ পদ্ধতি
যারা করোসল চাষ করতে চান, তারা প্রথমে চারা নিয়ে ভালো মাটি প্রস্তুত করতে পারেন। খুব বেশি পানি লাগে না এবং রোদে রাখতে হবে। চারা ৬-১২ মাসের মধ্যে বড় হয়ে যায় এবং ১-২ বছরের মধ্যে ফল ধরে।
টক আতা ফল এবং করোসলের সম্পর্ক
অনেকেই ভাবেন টক আতা আর করোসল আলাদা কিছু। আসলে বাংলাদেশে যেটাকে টক আতা বলা হয় সেটিই করোসল। শুধু নামের পার্থক্য। বিদেশে Soursop নামে পরিচিত হওয়ায় অনেকে এটি আলাদা ভাবেন।
করোসল গাছের পাতা ও ফলের গুণাগুণ
করোসল ফল যেমন উপকারী, তেমনি পাতাও ভীষণ স্বাস্থ্যকর। পাতায় এমন প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যেগুলো শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করতে সাহায্য করে। নিয়মিত করোসল চা খেলে শরীর হালকা লাগে, ঘুম ভালো হয় এবং মানসিক চাপ কমে।
করোসল পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন
পাতা শুকিয়ে ৫ মিনিট গরম পানিতে চুবিয়ে রাখুন। এরপর সেই পানি চা হিসেবে পান করুন। চাইলে মধুও দেওয়া যায়।
করোসল গাছের চারা কোথায় পাওয়া যাবে
বাংলাদেশের বিভিন্ন নার্সারি ছাড়াও অনলাইনে অনেকেই করোসল চারা বিক্রি করছেন। ঢাকার বাইরে জেলাগুলোতে সরকারি কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলেও সাহায্য পাওয়া যায়।
করোসল ফল ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কিভাবে সাহায্য করে
ফলের প্রাকৃতিক যৌগ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি কমাতে সহায়তা করে। তাই অনেকেই এটি হেলথ সাপোর্ট হিসেবে নেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ধরনের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
সংক্ষেপে
- করোসল ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- টক্সিন দূর করে
- মানসিক চাপ কমায়
- শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ রাখে
বাংলাদেশে এখন করোসল ফল পাওয়া সহজ এবং কেউ চাইলে নিজেরাই গাছ লাগাতে পারেন। স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য এই ফলকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে।
যোগাযোগ
আরও তথ্য জানতে বা করোসল নিয়ে প্রশ্ন করতে যোগাযোগ করুন:
ফোন: 01625881810